বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে 'বহুমুখী ও বিস্তৃত' উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেসনিক বলেছেন, নিরাপত্তা সম্পর্কসহ দুই দেশ একসঙ্গে অনেককিছু করতে পারে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরকালে ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উভয় দেশের সম্পর্ককে 'দৃঢ় ও গভীর' করতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই সম্পর্কে যে অগ্রগতি দেখা গেছে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে এমন কোনো পরিস্থিতি আমরা দেখতে চাই না।’
প্রতিরক্ষা সম্পর্কের বৈচিত্র্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন এই কূটনীতিক বলেন, তারা তাদের প্রতিরক্ষা প্রয়োজনে বাংলাদেশের ক্রয়ের বৈচিত্র্যকে স্বাগত জানায়।
ঢাকায় উভয় দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত নবম নিরাপত্তা সংলাপে বিষয়টি ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ অংশীদারদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নিশ্চিত করতে এটি বাংলাদেশের জন্য চমৎকার সুযোগ।’
যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বলেন, সামরিক খাতের আধুনিকীকরণে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে সাহায্য করতে পারে সে বিষয়ে কথা বলার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করার এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন উপায় খুঁজছি যাতে বাংলাদেশকে তার সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণে সহায়তা করতে পারি এবং আপনাদের উপকূলীয় সীমান্তে কী রয়েছে; আকাশ, স্থল, সমুদ্র ও সাইবারস্পেসে কী ঘটছে তা বোঝার জন্য আমরা সামুদ্রিক ডোমেইন সচেতনতায় বিনিয়োগ করতে পারি।’
রেসনিক বলেন, দুই দেশের মধ্যে এই সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও গভীর করতে তাদের অনেক সুযোগ রয়েছে।
সফরকালে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশে 'অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ' নির্বাচনকে সমর্থন করে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় মার্কিন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেজনিক
তিনি বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন আমাদের সংশিষ্ট কর্মকর্তারা।’
তিনিও আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায় যে বাংলাদেশ মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও অতীত কর্মের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, দুর্যোগ ত্রাণ, সামরিক আধুনিকীকরণ ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা করেছে। একই সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সমর্থন করতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও ভালো কী করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আগামী বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ সক্ষমতার ব্ল্যাকজ্যাক ইউএএস, ৩৫ ফুট সেফ প্যাট্রোল বোট এবং অতিরিক্ত জোডিয়াক রিজিড হাল বোট সরবরাহ করবে বলে আশা করছে। এসব ব্যবস্থা বাংলাদেশকে জাতিসংঘ মিশন পরিচালনা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সহায়তা করবে।
মার্কিন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বিশেষ সরঞ্জামগুলোর জন্য জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্টের (জিএসওএমআইএ) প্রয়োজন হয় না, তবে এর জন্য প্রযুক্তি সুরক্ষা ও বিদেশি উন্মোচন পর্যালোচনা প্রয়োজন হবে, যা ওয়াশিংটন করে থাকে।’
তিনি বলেন, এগুলো বিশেষ সরঞ্জাম এবং তারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে তাদের সহায়তা করতে পারে এমন সরঞ্জামগুলোর নতুন সরবরাহে সহায়তা করতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত।
তিনি আরও বলেন, ‘আরও উন্নত সংগ্রহের জন্য জিএসওএমআইএ প্রয়োজন। যখন বাংলাদেশ সরকার এর জন্য প্রস্তুত হবে তখন আমরা তাদের সঙ্গে একটি জিএসওএমআইএ সইয়ের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত।’
জিএসওএমআইএ ও অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট (এসিএসএ) দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা বাণিজ্যের সুযোগ সম্প্রসারণ, তথ্য আদান-প্রদান এবং সামরিক সহযোগিতার জন্য 'অপরিহার্য'।
মার্কিন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করছি যে, কীভাবে আমাদের সামরিক তথ্য রক্ষা করি তা বুঝতে পারে বাংলাদেশ। পাশাপাশি আমরাও আরও ভালোভাবে বুঝতে চাই যে বাংলাদেশ কীভাবে এর গোপন সামরিক তথ্য রক্ষা করে যাতে আমরা এটি পেতে পারি।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশিদের ‘আকাঙ্ক্ষা’র সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন কর্মকর্তা